খুলনা | শনিবার | ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ৭ পৌষ ১৪৩১

শেখ বাড়ির আশির্বাদপুষ্ট বুল বিশ্বাসের নতুন সুর

খুলনায় আ’লীগের দাপুটে হাইব্রিডরা ভোল পাল্টে অবসর নিচ্ছেন রাজনীতি থেকে

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:৩০ এ.এম | ২২ অগাস্ট ২০২৪


খুলনায় আ’লীগের দাপুটে হাইব্রিড নেতা ভোল পাল্টে নতুন সুর ধরেছেন। এখন তারা রাজনীতিতে অবসর নিচ্ছেন। সেই সঙ্গে তারা রাতারাতি কোটা আন্দোলনের পক্ষেও কথা বলছেন। অথচ শেখ হাসিনার সরকারের পতনের আগের দিনও তারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্তদের সম্পর্কে নানা প্রপাগান্ডা চালানো ছাড়াও হামলা চালানোর মতো ঘটনায় প্রকাশ্যে অংশ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন নগরীর সোনাডাঙ্গা থানা আ’লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বুলু বিশ্বাস। খুলনার শেখ বাড়ির আশির্বাদপুষ্ট সিদ্দিকুর রহমান বুলু বিশ্বাস ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ হেলাল উদ্দিন, সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল, শেখ সোহেল উদ্দিন, শেখ রুবেল ও শেখ বাবুর খুব কাছের লোক। গত বছর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পারিবারিক সফরে খুলনায় আসলে সেখানে অল্প কিছু আ’লীগ নেতা শেখ বাড়িতে প্রবেশ করতে পেরেছিলেন এবং শেখ হাসিনার সঙ্গে ছবি তুলতে পেরেছিলেন। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সিদ্দিকুর রহমান বুল বিশ্বাস।
সিদ্দিকুর রহমান বুলু বিশ্বাস ছিলেন, খুলনার শেখ পরিবারের বিশ্বস্ত লোক। খুলনার পানি উন্নয়ন বোর্ড, গণপূর্ত, সড়ক ও জনপথসহ বড় বড় সরকারি প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারী নিয়ন্ত্রণ করা অভিযোগ রয়েছে বুলু বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। তিনি শেখ বাড়ির কোনো না কোনো ব্যক্তির কথা বলে টেন্ডার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতেন। যা খুলনা শহরের সকল ঠিকাদার জানলেও প্রতিবাদ করতে সাহস পেতেন না। যে টেন্ডারে তার উপস্থিতি ছিল সরব। তিনি টেন্ডার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতেন। মুসলীম লীগ পরিবারের সন্তান হলেও হাল জামানায় তিনি ছিলেন আ’লীগের সুবিধাভোগীদের শীর্ষে। 
এদিকে হঠাৎ করে বুলু বিশ্বাস রাজনীতিতে অবসর নিয়েছেন বলে গতকাল বুধবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এনিয়ে খোদ আ’লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আ’লীগের এক নেতা বলেন, হাইব্রিডরা এখন ভোল পাল্টানো শুরু করেছেন। তাদের কারণেই আ’লীগের ত্যাগী নেতারা শেখ বাড়ি তথা ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দুতে থাকা নেতৃবৃন্দের ধারের কাছেও যেতে পারেননি। ফলে তৃণমূলে আ’লীগ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। যার খেসারত দিচ্ছে গোটা জাতি। আজ আ’লীগের দুর্দিনে তারা সটকে পড়ছে।
বুধবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, নগরীর সোনাডাঙ্গা থানা আ’লীগের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন সিদ্দিকুর রহমান বুলু বিশ্বাস। একই সঙ্গে তিনি রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণাও দেন।
নগরীর সোনাডাঙ্গা থানা আ’লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বুলু বিশ্বাস বলেন, আমার শারীরিক অবস্থা খারাপ। আমি আর কোন দিন কোন রাজনীতিতে যাবো না। রাজনীতি এখানেই শেষ করলাম।
তিনি বলেন, যে অবস্থা দেখেছি খুব খারাপ লাগছে। আমার নিজের সন্তান থাকলে কি করতাম। কোটা আন্দোলনের বিরুদ্ধে কোনদিন আমি কোন অবস্থানে যায়নি। যেতে চাইও না।
এই বিষয়ে কোনদিন কি আমাকে মাঠে পেয়েছেন প্রশ্ন করে তিনি বলেন, আমি ছিলাম না। আমি নৃসংশতা চাই না। আর আমি সাধারণ মানুষ হিসেবে বাঁচতে চাই, মানুষের সুখ-দুঃখে মানুষের পাশে থাকতে চাই। এ জন্য আমি পদত্যাগ করেছি।
এর আগে বুধবার তিনি গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে উলে­খ করেন, আমি সিদ্দিকুর রহমান বুলু বিশ্বাস, পিতা মরহুম আব্দুর রহমান টুকু বিশ্বাস। আমাদের পরিবার ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী। আমাদের পরিবারের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বাহিরে আমি আওয়ামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়েছি। সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেছি। আমার জানা মতে এই সময় আমি কোন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের সাথে খারাপ আচরণ করিনি। তার পরেও আমরা মানুষ হিসেবে কেউ ভুলত্র“টির ঊর্ধ্বে নয়। আমার আচরণে কেউ যদি বিন্দুমাত্র কষ্ট পেয়ে থাকেন আশা করি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ।
এতে তিনি আরও উলে­খ করেন, আমি দেশের গণতন্ত্র প্রিয় মানুষ ও আন্দোলনরত মেধাবী শিক্ষার্থীদের উপর সম্মান প্রদর্শন করে সোনাডাঙ্গা থানা আ’লীগের সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করছি।
এছাড়া দলের সাথে সকল প্রকার রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করছি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত সকলের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। আমি খুলনার একজন সাধারণ মানুষ হিসেবেই থাকতে চাই। তবে বিগত দিনের ন্যায় আপনাদের বিপদ আপদে সুখ-দুঃখে পাশে থাকবো ইনশাআল­াহ।
এদিকে গত কয়েকদিন দীর্ঘদিন দলে নিষ্ক্রিয় থাকা ১৬নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর আ’লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য আনিসুর রহমান বিশ্বাষ অসুস্থতা জনিত কারণে রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছেন।

্রিন্ট

আরও সংবদ